১. উৎপত্তি অনুসারে :
ক) প্রোমেরিস্টেম বা প্রারম্ভিক ভাজক টিস্যু (Promeristem) : মূল বা কাণ্ডের অগ্রভাগের শীর্ষদেশে একটি ক্ষুদ্র অঞ্চল রয়েছে যেখান থেকে পরবর্তীতে প্রাইমারি ভাজক টিস্যুর উৎপত্তি ঘটে, তাকে প্রারম্ভিক ভাজক টিস্যু বলে। এ অঞ্চল থেকেই প্রথম বৃদ্ধি শুরু হয়।
(খ) প্রাইমারি ভাজক টিস্যু (Primary meristem) : যে ভাজক টিস্যু উদ্ভিদের ভ্রূণাবস্থায়ই উৎপত্তি লাভ করে, তাকে প্রাইমারি ভাজক টিস্যু বলা হয়। মূল এবং কাণ্ডের শীর্ষে যে ভাজক টিস্যু থাকে তা-ই প্রাইমারি ভাজক টিস্যু। এদের কোষ বিভাজনের ফলে উদ্ভিদ দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। এ টিস্যু আমৃত্যু বিভাজনক্ষম থাকে। প্রারম্ভিক ভাজক টিস্যু হতে এদের উৎপত্তি হয়। প্রাইমারি ভাজক টিস্যু হতে প্রাইমারি স্থায়ী টিস্যুর সৃষ্টি হয়।
(গ) সেকেন্ডারি ভাজক টিস্যু (Secondary meristem) : যে ভাজক টিস্যু কোনো স্থায়ী টিস্যু হতে পরবর্তী সময়ে উৎপন্ন হয়, তাকে সেকেন্ডারি ভাজক টিস্যু বলে। সেকেন্ডারি ভাজক টিস্যু উদ্ভিদের ভ্রূণাবস্থার অনেক পরে সৃষ্টি হয়। উদাহরণ – কর্ক ক্যাম্বিয়াম, ইন্টার ফ্যাসিকুলার ক্যাম্বিয়াম।
২. অবস্থান অনুসারে :
(ক) শীর্ষক ভাজক টিস্যু (Apical meristem) : মূল, কাণ্ড বা এদের শাখা-প্রশাখার শীর্ষে অবস্থিত ভাজক টিস্যুকেই শীর্ষক ভাজক টিস্যু বলে। কতক পাতা ও ফলের শীর্ষেও ভাজক টিস্যু থাকতে পারে। শীর্ষস্থ ভাজক টিস্যুর বিভাজনের মাধ্যমেই এসব অঙ্গ দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। এরা প্রাথমিক স্থায়ী টিস্যু তৈরি করে থাকে। পুষ্পক উদ্ভিদে শীর্ষস্থ ভাজক টিস্যু একাধিক কোষ দিয়ে গঠিত। এরা প্রাইমারি ভাজক টিস্যু।
(খ) ইন্টারক্যালারি বা নিবেশিত ভাজক টিস্যু (Intercalary meristem) : দুটি স্থায়ী টিস্যুর মাঝখানে অবস্থিত ভাজক টিস্যুকে ইন্টারক্যালরি বা নিবেশিত ভাজক টিস্যু বলে। অঙ্গসমূহের বৃদ্ধির সময় শীর্ষস্থ ভাজক টিস্যু হতে কিয়দংশ পৃথক হয়ে এ প্রকার ভাজক টিস্যু সৃষ্টি করে। কাজেই এরা প্রাইমারি টিস্যু। ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ, পাইন, হর্সটেইল প্রভৃতি উদ্ভিদের পত্রমূল, মধ্যপর্বের গোড়ায়, পর্ব সন্ধিতে ও ফুলের বোঁটায় এ ধরনের ভাজক টিস্যু থাকে।
(গ) পার্শ্বীয় ভাজক টিস্যু (Lateral meristem) : মূল বা কাণ্ডের পার্শ্ব বরাবর লম্বালম্বিভাবে অবস্থিত ভাজক টিস্যুকে পার্শ্বীয় ভাজক টিস্যু বলে। এ প্রকার টিস্যুও দুটি স্থায়ী টিস্যুর মাঝখানে অবস্থিত। এরা স্থায়ী টিস্যু হতে উৎপন্ন হয়, তাই এরা সেকেন্ডারি ভাজক টিস্যু। এদের বিভাজনের ফলে মূল ও কাণ্ডের বৃদ্ধি প্রস্থে হয়ে থাকে। ইন্টারফেসিকুলার ক্যাম্বিয়াম, কর্ক ক্যাম্বিয়াম প্রভৃতি পার্শ্বীয় ভাজক টিস্যুর উদাহরণ। এদের কোষ বিভাজনের কারণে উদ্ভিদের সেকেন্ডারি বৃদ্ধি ঘটে।
৩. কোষ বিভাজন অনুসারে :
(ক) মাস ভাজক টিস্যু (Mass meristem) : যে ভাজক টিস্যুর কোষবিভাজন সৰ তলে (plane) ঘটে থাকে, ফলে সৃষ্ট কোষ সমষ্টি কোনো নির্দিষ্ট নিয়মে সজ্জিত না থেকে কোষপুঞ্জ গঠন করে, তাকে মাস ভাজক টিস্যু বলা হয়। এ প্রকার বিভাজনের ফলে উদ্ভিদ অঙ্গটি ঘনত্বে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়; যেমন- বর্ধনশীল ভ্রূণ, রেণুথলি, এন্ডোস্পার্ম তথা সস্য টিস্যু, মজ্জা, কর্টেক্স প্রভৃতি।
(খ) প্লেট ভাজক টিস্যু (Plate meristem) : যে ভাজক টিস্যুর কোষ মাত্র দুটি তলে (plane) বিভাজিত হয়, ফলে কোষগুলো প্লেটের মতো করে সজ্জিত হয়, তাকে প্লেট ভাজক টিস্যু বলা হয়। এ প্রকার বিভাজনের ফলে অঙ্গটি আয়তনে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়; যেমন -পাতা, বর্ধিষ্ণু বহিঃত্বক।
(গ) রিব ভাজক টিস্যু (Rib meristem) : যে ভাজক টিস্যুর কোষগুলো একটি তলে বিভাজিত হয়, ফলে কোষগুলো রৈখিক সজ্জাক্রমে একসারিতে অবস্থান করে এবং দেখতে বুকের পাঁজরের ন্যায় দেখায়, তাকে রিব ভাজক টিস্যু বলা হয়। এ প্রকার কোষ বিভাজনের ফলে একসারি কোষ সৃষ্টি হয়; যেমন- বর্ধিষ্ণু মূল ও কাণ্ডের মজ্জা রশ্মি।
৪. কাজ অনুসারে :
(ক) প্রোটোডার্ম (Protoderm) : যে ভাজক টিস্যুর কোষসমূহ উদ্ভিদদেহের ত্বক সৃষ্টি করে তাকে প্রোটোডার্ম বলে। মূল, কাণ্ড ও এদের শাখা-প্রশাখার ত্বক (এপিডার্মিস বা এপিব্লেমা) সৃষ্টি করা হলো প্রোটোডার্ম-এর কাজ।
(খ) প্রোক্যাম্বিয়াম (Procambium) : ক্যাম্বিয়াম, জাইলেম ও ফ্লোয়েম সৃষ্টিকারী ভাজক টিস্যুকে প্রোক্যাম্বিয়াম বলে। পরিবহন টিস্যু সৃষ্টি করাই প্রোক্যাম্বিয়ামের কাজ।
(গ) গ্রাউন্ড মেরিস্টেম (Ground meristem) : শীর্ষস্থ ভাজক টিস্যুর যে অংশ বারবার বিভাজিত হয়ে উদ্ভিদ দেহের মূল ভিত্তি তথা কর্টেক্স, মজ্জা ও মজ্জা রশ্মি সৃষ্টি করে তাকে গ্রাউন্ড মেরিস্টেম বলে।
সরল টিস্যু (Simple tissue) : সরল স্থায়ী টিস্যুর সবগুলো কোষ আকার, আকৃতি ও গঠন বৈশিষ্ট্যে একই ধরনের হয়।
কোষের আকৃতি ও প্রকৃতির উপর নির্ভর করে সরল টিস্যুকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে; যথা : ক. প্যারেনকাইমা, খ. কোলেনকাইমা এবং গ. স্ক্লেরেনকাইমা।
জটিল টিস্যু (Complex tissue) : জটিল স্থায়ী টিস্যু একাধিক প্রকার কোষ দিয়ে গঠিত এবং সম্মিলিতভাবে একই ধরনের কাজ সম্পন্ন করে।
কাজ, অবস্থান ও গঠন প্রকৃতি অনুযায়ী জটিল টিস্যু প্রধানত দু’প্রকার। যথা : ক. জাইলেম টিস্যু এবং খ. ক্লোয়েম টিস্যু। এ দু’প্রকার টিস্যু একত্রে পরিবহনতন্ত্র গঠন করে। এটি মূল থেকে পাতা পর্যন্ত বিস্তৃত। খাদ্যদ্রব্য ও পানি পরিবহন করাই এটির প্রধান কাজ।
ক্ষরণকারী বা নিঃস্রাবী টিস্যু (Secretory tissue) : যে টিস্যু হতে নানা প্রকার তরল পদার্থ (উৎসেচক, বর্জ্য পদার্থ = রেজিন, গদ, উদ্বায়ী তেল, আঠা ইত্যাদি) নিঃসৃত হয়ে থাকে, তাকে ক্ষরণকারী বা নিঃস্রাবী টিস্যু বলে।
ক্ষরণকারী টিস্যু দু’প্রকার যথা: ক. তরুক্ষীর টিস্যু (laticiferous tissue) এবং খ. গ্রন্থি টিস্যু (glandular tissue)।
Read more